Image View
Text View
Font Size
চিন্তিত সরকার তবে পিছু হটবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে। এতে ছয়জন নিহত এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ আহত হয়েছেন। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছে সরকার। সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ছাড় না দেওয়ার অবস্থানেই ছিল সরকার ও ক্ষমতাসীনেরা।
আন্দোলন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ
আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নেতারা মোবাইলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে দিকনির্দেশনা নেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কঠোর অবস্থানেই আছেন তাঁরা। সবাইকে এমন নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ঢুকেছে দাবি করে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করার কথা জানান তিনি। তবে আন্দোলনকারীদের আদালতের চূড়ান্ত রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার অনুরোধও করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতির বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল।’
তবে সোমবার সারা দিনের ঘটনায় ছাত্রলীগের মারমুখী মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় চিন্তিত আওয়ামী লীগ নেতারা। সেটা ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও প্রকাশ পেয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধরছি। সময়মতো সবকিছুই দেখবেন, সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে।’
তবে আন্দোলনকারীদের আরও অপেক্ষা করা উচিত ছিল বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘বিচারে শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটা দেখা উচিত ছিল। সেটি না দেখেই নানা ধরনের প্রোগ্রাম দিচ্ছে, রাস্তা অবরোধ করছে। রাস্তা অবরোধ করলে সবার ভোগান্তি হয়।’
কোটা আন্দোলনকারীদের আদালতে যাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরা কোর্টে যেতে পারেন, যেটা প্রধান বিচারপতি বলেছেন কিংবা তাঁরা এসে যোগাযোগ করতে পারেন। এ সবকিছুই করতে পারেন, এ সমস্ত রাস্তা তাঁদের জন্য খোলা রয়েছে। খোলা রাস্তায় না গিয়ে এ ধরনের রাস্তায় যাওয়া তাঁদের জন্য আমি মনে করি ঠিক ভালো না। এই জায়গাটি থেকে তাঁদের চলে আসা উচিত। এটাই হলো তাঁদের কাছে মেসেজ।’
সরকারের কঠোর বার্তা পাওয়ার পর সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ। কিন্তু এতে যে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, এমনটা ধারণা ছিল না আওয়ামী লীগ নেতাদের। তাঁদের মত, ঘটনা কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। কিন্তু ঘটনা এভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ায় তাঁদের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হতাহতের ঘটনা তো চিন্তার কারণ। কোনো হতাহত মেনে নেওয়া যায় না, খুশি হওয়ার বিষয় না, চিন্তিত হওয়ার বিষয়। কিন্তু এ সকল খুনের দায় বিএনপি, তারেক রহমান, জামায়াত ও আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের নিতে হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দুর্বলতাও সামনে এসেছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা বলছেন, এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ক্যাম্পাসে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা থাকবেন। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘সরকার চাইলে তো এক দিনই চাপ দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেটা করলে কি ইতিবাচক না নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। তবে সোমবারের ঘটনায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাদের চিন্তিত করেছে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ঢুকে গেছে। এখন আন্দোলন আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’