Image View
Text View
Font Size
হাজার কোটির বড় বড় ভবন কাজে এল না
বেসরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্প
রাহুল শর্মা, ঢাকা
পাঁচ বছরের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ বছর করা হলেও সব ভবনের নির্মাণই শেষ হয়নি। ১ হাজার ৬১০টি ভবনের মধ্যে এ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ৫৫৬টি। তবে বেশির ভাগ ভবনে আইসিটি ল্যাব স্থাপন; মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, আসবাব ও ল্যাপটপ সরবরাহ এবং ইন্টারনেট সংযোগ না দেওয়ায় সেগুলো কোনো কাজে আসছে না।
মেয়াদ আড়াই গুণ বাড়িয়েও এই হাল ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন (২য় সংশোধিত)’ নামের প্রকল্পের। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার (মাউশি) অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ না করায় নির্মিত হওয়া ভবনগুলো কোনো কাজে আসছে না। আবার আসবাব ও আইসিটি সরঞ্জাম কেনাকাটায় উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। মেয়াদ বৃদ্ধির মতো প্রকল্পের খরচ বেড়ে হয়েছে প্রায় আড়াই গুণ।
সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় ক্ষোভও প্রকাশ করা হয়। ওই সভায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর মতামতও দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ১,৬১০টি বেসরকারি কলেজের ভবন ও আইসিটি ল্যাব নির্মাণ এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, আসবাব সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশেফাকুস সালেহীন
গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বারবার ভবনের নকশা পরিবর্তন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন, করোনা মহামারি, আইসিটি সামগ্রী দেওয়ার জন্য নীতিমালা তৈরি ইত্যাদি কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, বর্ধিত মেয়াদে সব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে। তবে সব কলেজে আইসিটি ল্যাব স্থাপনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা সম্ভব না-ও হতে পারে।’
প্রকল্প সূত্র জানায়, নির্বাচিত বেসরকারি কলেজগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে। শুরুতে পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে একের পর এক জটিলতা দেখা দেয়। পরে দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ সাড়ে সাত বছর
বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। ডিপিপি সংশোধন করে খরচ বাড়িয়ে করা হয় ৫ হাজার ৫৬৮ কোটি ৬০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, নির্বাচিত ১ হাজার ৬১০টি বেসরকারি কলেজের মধ্যে গত ১২ বছরে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫৬টি ভবনের। বাকি ৫৪টির মধ্যে ৪৭টি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। তবে গত ১২ সেপ্টেম্বর জুম প্ল্যাটফর্মে পিএসসির ১৮তম সভায় জানানো হয়, নির্মাণাধীন ৪৭টি ভবনের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদে (চলতি বছরের ডিসেম্বর) ৩৪টির নির্মাণকাজ শেষ হবে। বাকি ১৩টি ভবন দোতলা/তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করে ব্যবহারযোগ্য করা যাবে। ডিপিপি অনুযায়ী, কলেজভেদে ভবনগুলো হবে ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
পিএসসির সভায় প্রকল্প শেষ করতে মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে সভাতেই বলা হয়, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্রতিস্থাপিত চারটি কলেজের ভবন নির্মাণকাজ, বিভিন্ন ভবনে বাকি থাকা অসংখ্য আইসিটি সামগ্রী কেনা ও সরবরাহ এবং প্রকল্পভুক্ত সব কলেজে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই চার কলেজের বাইরে মামলার কারণে আরও দুটির এবং পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে একটি কলেজে ভবন নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য ১২ সেপ্টেম্বরের পিএসসি সভায় ওই তিন কলেজকে প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
সূত্র বলেছে, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৫৬টি কলেজে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে ৯০৭টি ভবনে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে ৮০৬টিতে এবং ১ হাজার ৩৪০টিতে আসবাব সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়া বাকি ভবনগুলোতে প্রকল্পের বর্তমান মেয়াদে আইসিটি সামগ্রী, আসবাব সরবরাহ এবং সব ভবনে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য প্রস্তাবিত বর্ধিত মেয়াদে (২০২৫ সালের জুন) সব কাজ শেষ করতে প্রকল্প পরিচালককে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. হাসান মারুফ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১,৬১০টি কলেজের মধ্যে ভবন হয়েছে ১,৫৫৬টিতে।
বেশির ভাগে আইসিটি ল্যাব হয়নি, পায়নি প্রজেক্টর।
৫ বছরের মেয়াদ ২ দফায় বেড়ে সাড়ে ১২ বছর।
২,৩৮৭ কোটি থেকে ব্যয় বেড়ে ৫,৫৬৮ কোটি টাকা।