Image View
Text View
Font Size
বাইডেনের সব উল্টে দিচ্ছেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প
দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
জমকালো অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেই সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সব উল্টেপাল্টে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প অবশ্য আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ‘প্রায় ১০০টি’ নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। বাইডেন প্রশাসন বিগত চার বছরে যা যা করেছে, তার অনেক কিছু রদ অথবা বাতিল করতেই এসব নির্বাহী আদেশ জারি করা হবে।
বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় ট্রাম্প শপথ নেন। ২৪৮ বছরের মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলেন তিনি। গতকাল তাঁর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেডি ভ্যান্স।
শপথ নেওয়ার পর প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘ঠিক এ মুহূর্ত থেকে শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ। আজ থেকে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ হবে এবং সম্মানিত হবে। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে রাখব।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সারা বিশ্ব সূর্যালোকে ভেসে যাচ্ছে (সম্ভাবনা অর্থে) এবং আমেরিকার কাছে এই সম্ভাবনা আগের মতো কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।’
বাইডেন প্রশাসন এবং অভিবাসী সংকট মোকাবিলায় তাঁর কৌশলের তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী প্রশাসন ‘বিপজ্জনক অপরাধীদের’ আশ্রয় এবং সুরক্ষা দিয়েছে, যারা অবৈধভাবে আমাদের দেশে ঢুকেছে।
সরকার ‘বিদেশি সীমান্ত রক্ষার জন্য সীমাহীন তহবিল’ দিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার সীমান্ত রক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আমেরিকার বাণিজ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের সমৃদ্ধ করার জন্য আমরা বিদেশি রাষ্ট্রগুলোতে শুল্ক আরোপ এবং কর আরোপ করব। এই উদ্দেশ্যে, আমরা সমস্ত শুল্ক, ট্যারিফ এবং রাজস্ব সংগ্রহের জন্য বহিঃরাজস্ব পরিষেবা প্রতিষ্ঠা করছি।’
ট্রাম্প প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ২০১৬ সালে। কিন্তু চার বছর পর ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। এরপর নানা আলোচনা-সমালোচনায় পৌঁছে গিয়েছিলেন খাদের কিনারে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে, আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে, অধিকাংশ মার্কিন ভোটারের সমর্থন নিয়ে গত নভেম্বরে পরাজিত করেন ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসকে। দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান ট্রাম্প।
গতকাল ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে। উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প; ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, এরিক ট্রাম্প, ব্যারন ট্রাম্প; মেয়ে টিফানি ট্রাম্প, ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইসহ অনেকে। প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, শপথ গ্রহণের পর ট্রাম্প কী কী নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন, তার কিছু শপথের আগেই প্রকাশ করেছিল তাঁর শিবির। এগুলোর মধ্যে অভিবাসন নীতি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জ্বালানি নীতিও।
ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার স্থানীয় সময় গত রোববার বিকেলে মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময় বেশ কিছু নির্বাহী আদেশের বিষয়ে ধারণা দেন।
দুটি সূত্র বলেছে, অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছেন ট্রাম্প। এ জন্য তিনি সীমান্ত এলাকায় জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন, যাতে প্রশাসনের ব্যবহারের জন্য প্রতিরক্ষা দপ্তরের তহবিল সরবরাহ পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁর প্রথম মেয়াদে অভিবাসন সম্পর্কে নেওয়া বেশ কিছু পদক্ষেপ আবারও চালু করবেন ট্রাম্প। পাশাপাশি অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেসব বিষয়ে নমনীয় হয়েছিলেন, সেগুলোয় আবার কঠোর হবেন ট্রাম্প।
সূত্র দুটি আরও জানায়, মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, সে পথে আবারও হাঁটবেন তিনি। তাঁর ওই নীতির প্রতিপাদ্য ছিল ‘মেক্সিকোতেই থাকো’। এ ছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বেশ কিছু মাদক চক্রকে ট্রাম্প ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করবেন।
রোববার রাতে নির্বাচনী প্রচারণায় তহবিল জোগানদাতা ও মিত্রদের সঙ্গে অভিষেক-পূর্ব মিলনমেলায় ট্রাম্প বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করব। সংখ্যায় সেগুলো ১০০টির কাছাকাছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন যে ধ্বংসাত্মক আর কঠোর নির্বাহী আদেশ জারি করেছিল, তার অনেকগুলো আমি কলমের খোঁচায় বাতিল করে দেব।’
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প হয়তো তাঁর কলমের খোঁচায় অনেক নির্বাহী আদেশ জারি করবেন, কিন্তু তাঁর বেশ কিছু আদেশের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় সরকার ও তার পরিচালনও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। টেলিফোনে স্টিফেন মিলার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আভাস দিয়েছেন, ট্রাম্প এমন নির্বাহী আদেশ জারি করতে চলেছেন, যা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের চাকরির সুরক্ষা কমিয়ে দেবে অথবা তা বাতিল করা হবে। ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে এমন একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন ট্রাম্প। তবে বাইডেন ক্ষমতায় এসেই তা বাতিল করেছিলেন।
ধনকুবের ইলন মাস্ক ও উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীর নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির আনুষ্ঠানিক ভূমিকা ও কর্তৃত্বও ক্ষমতা গ্রহণ করেই ঠিক করবেন ট্রাম্প। জ্বালানি ইস্যুতেও ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করতে চলেছেন। এতে স্থানীয়ভাবে জ্বালানি উৎপাদন এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য আইনি সুরক্ষা ও ভূমি বরাদ্দ সহজ হবে।
এ মুহূর্ত থেকে শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ: ট্রাম্প
প্রথম দিনেই ১০০টির কাছাকাছি নির্বাহী আদেশ জারি।
অভিবাসন নীতি আরও কঠোর, মেক্সিকো সীমান্তে আরও কড়াকড়ি।